ঢাকা ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লিভার ক্যানসার প্রতিরোধে জীবনধারায় পরিবর্তন আনুন: বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

  • অনলাইন ডেক্স
  • আপলোড সময় : ০৬:২০:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
  • ২২৮ Time View

অনলাইন ডেস্ক:
লিভার বা যকৃত আমাদের শরীরের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শরীরকে বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্ত রাখে, বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং সার্বিক সুস্থতায় বড় ভূমিকা রাখে। তবে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, স্থূলতা, মদ্যপান, হেপাটাইটিস বি ও সি, এবং অন্যান্য কারণে এই অঙ্গটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে—যা শেষমেশ লিভার ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।

ভারতের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ও হেপাটো-বিলিয়ারি বিশেষজ্ঞ ডা. বসন্ত মহাদেবাপ্পা বলেছেন, জীবনযাপনে কিছু সহজ পরিবর্তন এনে লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, “লিভার ক্যানসার ধীরে ধীরে বিকশিত হয় এবং উপসর্গ প্রকাশ পেতে সময় নেয়। যখন রোগ ধরা পড়ে, তখন তা অনেক সময় শেষ পর্যায়ে চলে যায়। তাই প্রতিরোধ ও সচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”


🧬 লিভার ক্যানসার প্রতিরোধে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ জীবনধারা

১️⃣ হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ও টিকা গ্রহণ

হেপাটাইটিস বি-এর টিকা বাংলাদেশসহ ভারতে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। এটি লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। পাশাপাশি হেপাটাইটিস বি ও সি স্ক্রিনিং, জীবাণুমুক্ত সূচ ব্যবহার ও সুরক্ষিত যৌন আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২️⃣ অ্যালকোহল সীমিত করা বা পরিহার

অ্যালকোহল লিভারের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর উপাদানগুলোর একটি। ডা. বসন্ত পরামর্শ দিয়েছেন—অ্যালকোহলের বদলে লেবু পানি বা নারকেল পানি পান করা যেতে পারে।

৩️⃣ স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা

অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা লিভারে চর্বি জমিয়ে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার, যেমন ওটস, মিলেট, শাকসবজি, ফল এবং নিয়মিত হাঁটা বা যোগব্যায়াম এই ঝুঁকি কমায়।

৪️⃣ আফ্লাটক্সিন থেকে বিরত থাকা

ভুট্টা, বাদাম, ডাল ইত্যাদিতে ছত্রাকজাত আফ্লাটক্সিন থাকতে পারে, যা লিভারের জন্য ক্ষতিকর। এসব খাবার শুকনো, পরিষ্কার ও বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে সংরক্ষণ করা উচিত।

৫️⃣ ধূমপান ও রাসায়নিক এড়ানো

ধূমপান লিভারের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। কীটনাশক বা শক্তিশালী ক্লিনার ব্যবহারেও সতর্ক থাকা জরুরি।

৬️⃣ নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও স্ক্রিনিং

প্রতি বছর অন্তত একবার লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT) ও আলট্রাসোনোগ্রাফি করা উচিত, বিশেষ করে যারা হেপাটাইটিস বা মদ্যপানের ইতিহাসে আক্রান্ত।


🌿 লিভার সুস্থ রাখতে যা করবেন:

✅ পর্যাপ্ত পানি পান করুন
✅ তুলসি চা বা হার্বাল ড্রিংক পান করুন
✅ প্রতিদিন অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমান
✅ মেডিটেশন ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে মনোযোগ দিন
✅ প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন

বিশেষজ্ঞদের মতে, লিভার ক্যানসার একদিনে হয় না; বরং বছরের পর বছর ধরে শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর অভ্যাস ও বিষাক্ত পদার্থ এর পেছনে দায়ী। তবে সময়মতো সচেতনতা, টিকা, সুষম খাদ্য, ব্যায়াম ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা মেনে চললে এই নীরব ঘাতককে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ

লিভার ক্যানসার প্রতিরোধে জীবনধারায় পরিবর্তন আনুন: বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

আপলোড সময় : ০৬:২০:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক:
লিভার বা যকৃত আমাদের শরীরের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শরীরকে বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্ত রাখে, বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং সার্বিক সুস্থতায় বড় ভূমিকা রাখে। তবে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, স্থূলতা, মদ্যপান, হেপাটাইটিস বি ও সি, এবং অন্যান্য কারণে এই অঙ্গটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে—যা শেষমেশ লিভার ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।

ভারতের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ও হেপাটো-বিলিয়ারি বিশেষজ্ঞ ডা. বসন্ত মহাদেবাপ্পা বলেছেন, জীবনযাপনে কিছু সহজ পরিবর্তন এনে লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, “লিভার ক্যানসার ধীরে ধীরে বিকশিত হয় এবং উপসর্গ প্রকাশ পেতে সময় নেয়। যখন রোগ ধরা পড়ে, তখন তা অনেক সময় শেষ পর্যায়ে চলে যায়। তাই প্রতিরোধ ও সচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”


🧬 লিভার ক্যানসার প্রতিরোধে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ জীবনধারা

১️⃣ হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ও টিকা গ্রহণ

হেপাটাইটিস বি-এর টিকা বাংলাদেশসহ ভারতে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। এটি লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। পাশাপাশি হেপাটাইটিস বি ও সি স্ক্রিনিং, জীবাণুমুক্ত সূচ ব্যবহার ও সুরক্ষিত যৌন আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২️⃣ অ্যালকোহল সীমিত করা বা পরিহার

অ্যালকোহল লিভারের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর উপাদানগুলোর একটি। ডা. বসন্ত পরামর্শ দিয়েছেন—অ্যালকোহলের বদলে লেবু পানি বা নারকেল পানি পান করা যেতে পারে।

৩️⃣ স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা

অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা লিভারে চর্বি জমিয়ে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার, যেমন ওটস, মিলেট, শাকসবজি, ফল এবং নিয়মিত হাঁটা বা যোগব্যায়াম এই ঝুঁকি কমায়।

৪️⃣ আফ্লাটক্সিন থেকে বিরত থাকা

ভুট্টা, বাদাম, ডাল ইত্যাদিতে ছত্রাকজাত আফ্লাটক্সিন থাকতে পারে, যা লিভারের জন্য ক্ষতিকর। এসব খাবার শুকনো, পরিষ্কার ও বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে সংরক্ষণ করা উচিত।

৫️⃣ ধূমপান ও রাসায়নিক এড়ানো

ধূমপান লিভারের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। কীটনাশক বা শক্তিশালী ক্লিনার ব্যবহারেও সতর্ক থাকা জরুরি।

৬️⃣ নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও স্ক্রিনিং

প্রতি বছর অন্তত একবার লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT) ও আলট্রাসোনোগ্রাফি করা উচিত, বিশেষ করে যারা হেপাটাইটিস বা মদ্যপানের ইতিহাসে আক্রান্ত।


🌿 লিভার সুস্থ রাখতে যা করবেন:

✅ পর্যাপ্ত পানি পান করুন
✅ তুলসি চা বা হার্বাল ড্রিংক পান করুন
✅ প্রতিদিন অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমান
✅ মেডিটেশন ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে মনোযোগ দিন
✅ প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন

বিশেষজ্ঞদের মতে, লিভার ক্যানসার একদিনে হয় না; বরং বছরের পর বছর ধরে শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর অভ্যাস ও বিষাক্ত পদার্থ এর পেছনে দায়ী। তবে সময়মতো সচেতনতা, টিকা, সুষম খাদ্য, ব্যায়াম ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা মেনে চললে এই নীরব ঘাতককে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন