বাজারে দাম না থাকায় হিমাগারে সংরক্ষিত আলু নিয়ে বিপাকে জয়পুরহাটের কৃষকরা
ভালো লাভের আশায় জয়পুরহাটের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এবার হিমাগারে বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষণ করেছিলেন। কিন্তু বাজারে প্রত্যাশিত দাম না থাকায় উল্টো তাঁরা প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এতে জেলায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গভীর হতাশা।
জানা গেছে, আলু উৎপাদন থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ২৪ থেকে ২৫ টাকা। সরকার হিমাগার গেটে প্রতি কেজি আলুর দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও সেই দরে কোনো আলু বিক্রি হচ্ছে না। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৯-১০ টাকায়, ফলে প্রতি কেজিতে ১৬ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে।
বর্তমানে জেলায় ১৩ লাখ ৮০ হাজার ৬৫০ বস্তা আলু হিমাগারে মজুত রয়েছে। প্রতি বস্তায় গড়ে ৮৫০ টাকা লোকসান ধরা হলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর আগে হিমাগার গেট থেকে ২০ লাখ ৬৪ হাজার বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে, যেখানে ক্ষতি হয়েছে ১৭৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে জয়পুরহাটের আলু খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯৩ কোটি টাকা।
ক্ষেতলাল উপজেলার ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান মিলন বলেন, “আলু উৎপাদন থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ২৪-২৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৯-১০ টাকায়। এতে প্রতি কেজিতে ১৬ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে। আলু আমার তহবিল খেয়ে ফেলেছে।”
কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম আকন্দ বলেন, “৪ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করেছিলাম। এতে আমার ৫৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। আলু বিক্রি করে মাত্র ৫ লাখ টাকা পেয়েছি। আমার প্রায় ৫১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে জয়পুরহাটে ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে ১০ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন আলু। এর মধ্যে জেলার ২১টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয় ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার বস্তা আলু। চলতি মৌসুমে সংরক্ষণের মেয়াদ শেষ হবে ১৫ নভেম্বর।
কালাই পৌর শহরের এম ইসরাত হিমাগারের ব্যবস্থাপক আবু রায়হান বলেন, “মৌসুমের শুরুতে ২ লাখ ৩০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এখনো ৭৩ হাজার বস্তা রয়েছে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার বস্তা বের হওয়ার কথা, কিন্তু তা হচ্ছে না।”
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান জানান, গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হিমাগারগুলোতে ৮২ হাজার মেট্রিক টন বা ১৩ লাখ ৮০ হাজার বস্তা আলু রয়েছে। এর অর্ধেকই বীজ আলু। সরকার ২২ টাকা কেজি দরে আলু কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলেও তা কার্যকর হয়নি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, “গত বছর চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়েছে। সেই কারণে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু সংরক্ষণ করেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। সরকার ২২ টাকা কেজি দরে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করলেও তা বাজারে কার্যকর হয়নি।”
অনলাইন ডেক্স 
























