চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে গোপন অস্ত্রের কারখানা: কারা পেছনে, উঠছে নানা প্রশ্ন
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের ছিন্নমূল এলাকায় দেশীয় অস্ত্র তৈরির একটি গোপন কারখানার সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শনিবার (৩০ আগস্ট) ভোরে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত বিশেষ অভিযানে কারখানা থেকে ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৩৫ রাউন্ড খালি কার্তুজ, ৫ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ধারালো অস্ত্র, ওয়াকিটকি, মেগাফোন, ফ্লেয়ার এবং অস্ত্র তৈরির নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এসময় চারজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
কিন্তু ঘটনাটি শুধু অস্ত্র উদ্ধারেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পেছনে কে বা কারা জড়িত, সেই প্রশ্নই এখন আলোচনায়।
সন্দেহজনক কার্যকলাপ, অদৃশ্য ছত্রছায়া
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ছিন্নমূল এলাকায় অপরিচিত কিছু মানুষের যাতায়াত ছিল চোখে পড়ার মতো। রাতের বেলায় গোপনে বিভিন্ন মালামাল আনা-নেয়া হতো। অথচ স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি। অনেকে ধারণা করছেন, প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়া ছাড়া এত বড় কারখানা গড়ে ওঠা সম্ভব নয়।
শুধু স্থানীয় সন্ত্রাসী নয়?
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উদ্ধার হওয়া সরঞ্জাম ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এটি কেবল সাধারণ সন্ত্রাসীদের জন্য তৈরি করা হয়নি। ওয়াকিটকি, মেগাফোন ও ফ্লেয়ার—এসব উপকরণ কোনো সংগঠিত নেটওয়ার্ক বা বড় ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এ অস্ত্র কারখানার সঙ্গে কি বড় কোনো সন্ত্রাসী বা রাজনৈতিক গোষ্ঠী যুক্ত?
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
অঞ্চলটিতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কার্যক্রম চালু থাকলেও কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে গেল, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। কেউ কেউ বলছেন, স্থানীয় কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তা কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ‘নীরব ভূমিকা’ এ চক্রকে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে।
আগেও ঘটেছে এমন ঘটনা
সীতাকুন্ড এলাকায় এর আগেও মাদক ও অবৈধ পণ্য পাচারের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান অনেক চক্রকে সক্রিয় হতে সহায়তা করছে। ফলে এবার অস্ত্র কারখানার সন্ধান মেলায় ধারণা জোরালো হয়েছে যে, এ এলাকা ধীরে ধীরে অপরাধ চক্রের জন্য ‘সেফ জোনে’ পরিণত হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর বার্তা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তারা বদ্ধপরিকর। সন্ত্রাস ও অবৈধ অস্ত্র কারবার দমনে এই ধরনের অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানাই রয়ে গেল—এই অস্ত্র কারখানা কারা পরিচালনা করছিল? আটক চারজন কি কেবল নামমাত্র সদস্য, নাকি এর পেছনে আরও শক্তিশালী কোনো চক্র সক্রিয়?
অনলাইন ডেক্স 
























